অশোকের
গল্প : অশোকের সিংহাসন লাভ
মৌর্য সম্রাট বিন্দুসারের পর ২৭৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে
তাঁর পুত্র অশোক মগধের সম্রাট হন । বিন্দুসার স্বেচ্ছায় অশোককে সিংহাসন দেননি ।
অশোক কৌশলে দখল করেছিলেন ।
ঘটনা হল – সন্ত্রাট বিন্দুসার অশোককে পছন্দ করতেন
না , সহ্যও করতে পারতেন না । তিনি বড়ো ছেলে সুসমিকে সিংহাসনে বসাতে মনস্থির
করেছিলেন । বিন্দুসারের পর সুসীম সম্রাট হবে একথা সবারই জানা ছিল ।
সুসীম ছিলেন চপল স্বভাবের ছেলে । তিনি ঠাট্টা করে
রাজসভার এক বৃদ্ধ অমাত্যের মাথায় চাটি মেরেছিলেন । এই ঘটনায় অমাত্য ও মন্ত্রীরা
অপমানিত ও ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন । তারা ভাবলেন , এ ছেলে এখনও রাজা হয়নি তাতেই এ রকম
। রাজা হলে কী হবে ? তারা ঠিক করলেন যে ভাবেই হোক সুসীমের রাজা হওয়া আটকাতে হবে ।
আর অশোককে রাজা করতে হবে ।
এদিকে তক্ষশীলার প্রজারা আবার বিদ্রোহ ঘোষণা করে ।
এই সুযোগে মন্ত্রীরা যুক্তি করে রাজা বিন্দুসারকে পরামর্শ দিলেন যে , সুসীমকে
বিদ্রোহ দমন করার জন্য পাঠানো হোক । এর আগে অশোক একবার খুব সহজেই তক্ষশীলার
বিদ্রোহ দমন করে ফিরে এসেছিলেন । তাই সুসীমের পক্ষেও বিদ্রোহ দমন করা কঠিন হবে না
। তাছাড়া বিদ্রোহ দমন করে বিজয়গৌরবে ফিরে এলে সুসামের প্রতি প্রজাদের আনুগত্যও
অনেক বেড়ে যাবে । বিন্দুসারের নির্দেশে সুসীম
তক্ষশীলায় গেলেন , কিন্তু বিদ্রোহ দমন করা সহজ হল না । ফলে তাকে
তক্ষশীলায় ঘাঁটি গেডে থাকতে হল । ইতিমধ্যে বিন্দুসার অসুস্থ হয়ে পড়লেন । তিনি
মন্ত্রীদের । বললেন — আশোককে তক্ষশীলায় পাঠিয়ে যত শীঘ্র সম্ভব সুসীমকে নিয়ে
আসার ব্যবস্থা করুন ।
মন্ত্রীরা প্রকাশ্যে রাজার বিরোধিতা করতে না পারলেও
কৌশলে অশোককে সিংহাসনে বসানোর জন্য ষড়যন্ত্র করলেন । এঁরা বললেন , বাজ , অশোক খুব
অসুস্থ তাকে এখনই পাঠানো যাবে না । মন্ত্রীরা । অশোককে মিথ্যা রোগী সাজিয়ে
চিকিৎসার ব্যবস্থাও করেছিলেন ।
এদিকে রাজা আরো অসুস্থ হয়ে পড়লেন , ক্ৰমে
মৃত্যুকাল খনিয়ে । এল । সুযোগ বুঝে মন্ত্রীরা অশোককে রাজসাজে সাজিয়ে বিন্দুসারের
। কাছে উপস্থিত করে বললেন যে , রাজন এখন অশোককে সিংহাসনে অভিষিক্ত করা ছাড়া
আমাদের কাছে আর কোনো উপায় নেই । এখনই । অশোককে সিংহাসনে অভিষিক্ত করা হোক সুসীম
ফিরে এলে তাকে সংহাসনে বসানো হবে ।
বাধ্য হয়ে মুমুর্ষ বিন্দুসার অপ্রিয় পুত্র অশোকের
মাথায় রাজমুকুট পরিয়ে দিলেন । অশোক হলেন মৌর্য সাম্রাজ্যের সম্রাট , আর
বিন্দুসার মনের দুঃখ ক্ষোভে , রক্ত বমি করতে করতে মারা গেলেন ।
No comments:
Post a Comment